Description
কালের বিবর্তনে দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এক কালের কৃষক-কিষানীর ধান ভাঙ্গার প্রধান যন্ত্র ঢেঁকি। অতীতে গ্রাম বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ধান থেকে চাল তৈরীর জন্য কিংবা চালের আটা তৈরীর জন্য একমাত্র ঢেঁকিই ছিল ভরসা। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে ম্লান হয়ে গেছে আগেকার দিনের সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির ব্যবহার। ৮০-৯০ দশকে জেলার গ্রাম এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের সারা বছরের ভাতের চাল বাড়িতে পাতানো ঢেঁকিতে ছেঁটে প্রস্তুত করত। ভাদ্র মাসে আউস ও অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে রোপা আমন ধান ঘরে উঠলে প্রায় প্রতিটি বাগিতেই নানা রকম পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। আর এজন্য বাড়িতে বাড়িতে আটা কোটার ধুম পড়ে যেত। আমন ধান কাটা শেষে পৌষ মাসে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার শব্দে অনেকের রাতের ঘুম নষ্ট হতো। আবার ভোর বেলা ঢেঁকির শব্দে অনেকের ঘুম ভাঙ্গত। ধান ভেঙ্গে চাল ছাঁটার জন্য মহিলারা আবার কখনও মহিলার পাশাপাশি পুরুষরাও ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভাংতো। দুইজন মহিলা সারাক্ষন ঢেঁকিতে পাড় দিত আর একজন ঢেঁকির আগায় বসে শুকনো ধানগুলিকে উনুতে (ভাঙ্গার গর্তে) এগিয়ে দিত। এভাবেই সারা রাত ধরে গ্রামের গৃহবধুরা তাদের সারা বছরের চাল ঢেঁকিতে ছেঁটে মাটির কুঠি কিংবা বাশেঁর তৈরী ডোলে ভরে সারাবছরের জন্য সংরক্ষন করে রাখত। সে সময় ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত খেয়ে অধিকাংশ মানুষই যেমন তৃপ্তি পেত, তেমনী সুস্থ জীবনযাপন করত। বর্তমানে আধুনিক যুগে চাকচিক্কের আধিক্যে হারিয়ে গেছে সেই ঢেঁকি ছাটা চাল। এখন পাড়ায় পাড়ায় ধান ভাঙ্গা হাসকিং মিল এমনকি ভ্রাম্যমান মিল প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভেঙ্গে দেয়ায় ঝকঝকে চাল, খাটুনি কম ও সময় সাশ্রয় হওয়ায় সেকেলের ঢেঁকি আর কোথাও চোখে পড়েনা।