Description
নিম পাউডার এর ৯ টি গুনাগুন ও উপকারিতা
নিম পাউডার
নিম সেরা বৃক্ষ গুলোর মধ্যে একটি । ওষধি গাছ হিসেবে নিমের পরিচিতি বেশি। নিমের বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica A.Juss পরিবার Meliaceae । খ্রিষ্টপূর্ব ৫ হাজার বছর আগে থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে নিমের অস্তিত্ব ছিল বলে ইতিহাসে জানা যায় । প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রকমভাবে নিমের ব্যবহার করার সাথে সাথে গবেষণার কাজ গুলো শুরু করা হয় । ১৯৪২ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে নিম নিয়ে গবেষণার যাত্রা শুরু করে ছিলেন । তাছাড়া ১৯৭২ সালে আমেরিকা নিম নিয়ে গবেষণা শুরু করে । ফলে আমরা নিমের নতুন ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারছি । বর্তমানে বাংলাদেশ সহ, ভারত, মায়ানমার, পাকিস্তান ও সোদি আরবে নিম গাছ পাওয়া যায়।
নিম গাছের বহুমুখী উপকারিতার জন্য একে অনেকেই বন্ধু বৃক্ষ বলে থাকেন।
নিমের ব্যবহার সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সমানভাবে রয়েছে। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় আরও সুনিপুণ ভাবে মানুষ নিমের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। কথায় আছে বাড়ির উঠানে একটা নিম গাছ থাকা মানে বাড়িতে একজন ডাক্তার থাকা। তাছাড়া নিমের অক্সিজেন মানবদেহের জন্য খুবই উপকারি। শুধু মানবদেহের জন্য নয় পরিবেশের জন্য উপকারী নিম গাছ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিমকে “একুশ শতকের বৃক্ষ “বলে ঘোষণা করেছে।
নিম গাছের প্রতিটি অংশ আমাদের কাজে লাগে। নিমের ফুল, ফল, পাতা, গাছের কচি ডাল, শিকড়, বাঁকল ও কাঠ সবই আমাদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিস। তবে ব্যবহারের দিক থেকে নিম গাছের পাতার ব্যবহার বেশি দেখা যায় ।
নিমের পাতা বাটা বিভিন্ন রকমভাবে আমরা ব্যবহার করে থাকি। তবে বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনকে আরও সহজ করার প্রয়াসে নিমের পাতার গুড়া বা পাউডার হিসেবে পাওয়া যায়। নিম পাতার পাউডার নিমের পাতা বাটার মতো কার্যকরি। নিমের পাউডারে রয়েছে এন্টিবেকটেরিয়াল, এন্টিসেপটিক, এন্টিমাক্রোবিয়াল এবং এন্টিইনফ্লামেটরি প্রোপার্টিজ। নিম পাউডারের এই সকল উপাদান গুলো মানুষের জন্য বিশেষ উপকারী।
আধুনিক সময়ে আয়ূর্বেদ চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম প্রসাধনীতে ব্যবহার করা,হচ্ছে নিম পাউডার।
বলা যায় বাহিক্য ও অভ্যন্তরীণ সকলে ভাবে নিম পাউডারের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। তবে কিছু ক্ষেএে নিম পাউডারের ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। যেমনঃ
১.খুশকি
খুশকি চুলের জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর একটি সমস্যা। চুলের স্বাস্থ্যকর ভাবে বেড়ে ওঠায় খুশকি যেন মূল বাধা। প্রতিটি ঋতুতে আমরা সবাই কম আর বেশি এই খুশকির সমস্যা ভোগ করি। মূলত খুশকি হচ্ছে আমাদের মাথার ত্বকের সংক্রমিত হওয়ার একটি রোগ। মাথার ত্বকের মরা কোষ গুলো খুশকি আকারে আমরা দেখতে পায়। তবে নিমের পাউডার আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে খুব সহজেই। কারণ নিম পাউডারের এন্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করে চুলের গোড়া শক্ত করে। নিম পাউডারের সাথে সামন্য পানি নিয়ে পেস্ট তৈরি করে চুলের গোড়ায় গোড়ায় দিতে হবে। ২০ মিনিট পরে চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাছাড়া আমলকি পাউডার, মেহেদী পাতা পাউডারের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
২.ত্বকের সংক্রমণ
ত্বকের সংক্রমণ একটি সাধারণ রোগ আমাদের জন্য। সাধারণত হাতে বা পায়ের আঙ্গুলের মাঝে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। তাছাড়া শরীরে শুষ্ক স্থান গুলো সাদা হয় এই সংক্রমণ গুলো দেখা দেয়। নিম পাউডার ত্বকের এই সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। নিমের পাউডারে থাকা এন্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ ত্বকের যেকোন প্রকার সংক্রমন থেকে মুক্তি দেয়। পরিমাণত নিম পাউডারে সাথে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে সংক্রমিত জায়গায় দিতে হবে, যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয় তাহলে কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন, এতে ময়েশ্চারাইজারের কাজটিও হয়ে যাবে।
৩.ত্বকের ব্রণের সমস্যায়
এই সাধারণ একটা ত্বকের সমস্যা প্রায়শ আমরা ভুগে থাকি। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও খাদ্যভাসে সুষম খাবারের সমন্বয়ের অভাব। তবে ত্বকের এই সমস্যার সমাধানও নিমের পাউডারের সম্ভব। কারণ নিম পাউডারের থাকা এন্টিসেপটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিভায়রাল ও এন্টিফালামেটরি প্রোপার্টিজ। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, হারবাল ফেসিয়াল ক্রিম গুলোতে নিম পাউডার ব্যবহার করা হয়।
ব্রণের এই সমস্যায় নিম পাউডারের সাথে সামন্য পানি ও পরিমানত মতো টক দই মিশিয়ে ফেস প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার বেশ ভালো একটা ফল পাওয়া যাবে।
৪. টুথপেষ্টর সাথে নিম পাউডার
দাতের যত্নে নিম পাউডারের ব্যবহার বেশ পুরনো। আপনার দাঁতের যত্নে টুথপেস্টের সাথে সামন্য নিম পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে দাতের কাবেটি, দাত ক্ষয়, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া সহ সকল সমস্যা সমাধান করবে। তাছাড়া মুখে, দূর্গন্ধ দূর করে নিম পাউডার। সুতরা, বলা যায়,দাতের যত্বে বেশ উপকারী নিম পাউডার।
৫. উকুন প্রতিরোধিত করে
উকুন পরশ্রায়ী একটি প্রানী যা মানুষের চুলে বাস করে। সাধারনত চুলের গোড়া অপরিষ্কার ও সংক্রমিত হলে চুলে উকুনের প্রকোপ দেখা দেয়। এদের খাদ্য হচ্ছে মাথার ত্বকের রক্ত শুষে খাওয়া। তবে নিম পাউডার উকুন প্রতিরোধে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । নিমের এন্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ গুলো উকুনকে মারতে সাহায্য করে এবং উকুনের ডিম গুলো যা চুলের গোড়ায় আঠার মতো লেগে থাকে তা সহজে নির্মূল করে।
খুব সাধারনভাবে নিমের পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে দিতে পারেন। ২০ মিনিট পরে তা কোন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুলকে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। সপ্তাহে ২ বারে ব্যবহার করলে মাথায় উকুনের প্রকোপ অনেক কমে যাবে।
৬. একজিমা দূর করতে
একজিমা ত্বকের একটি বিশ্রী সমস্যা । একজিমা মানে ত্বকের ভিতরের লেয়ার পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে এবং যা ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার একটা আশংকা থাকে। সাধারণত শিশু থেকে বৃদ্ধ এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। নিম পাউডার একজিমা সারাতে বেশ কার্যকরি। এ জন্য আপনাকে নিম পাউডারের সাথে পরিমাণ মতো পানি ও হলুদ গুড়া মিশাতে হবে এবং ক্ষত স্থানে লাগাতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে একজিমা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৭.চুল ঝরে পড়া প্রতিরোধ করে
চুল পড়ার সমস্যা মু্ূলত তখন দেখা যায়, যখন আমাদের চুলের ভিতরের টিস্যু গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফলিক এসিড কমে যায় । তবে নিম পাউডার আপনার চুল পড়ার এই সমস্যা সমাধান করবে।
নিম পাউডারের সাথে এলোভেরা জেল ও পানি মিশিয়ে সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহারে চুল পড়ার সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। এই পেস্টটি চুলের গোড়ায় গোড়ায় দিতে হবে এবং ২০ – ৩০ মিনিট চুলে রেখে পরে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। এই পেস্টটি আপনার চুলের গোড়া মজবুত সহ চুলকে ঘন ও লম্বা করতে সাহায্য করবে।
৮. সাইনাসের সমস্যায়
সাইনাসের সমস্যা আমাদের কম – বেশি সবার রয়েছে। ঠান্ডা জনিত এই রোগের নাক মুখ বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়ে যায়। নিমের পাউডার সাইনাসের ক্ষেত্রে বেশ উপকারি। এক চামচ নিম পাউডার এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে দুই – তিন ফোটা করে দিনে দুই বার ব্যবহার করতে পারেন৷
৯.প্রেসটিসাইড হিসেবে
নিমের পাউডারে সাথে পানি মিশিয়ে প্রেসটিসাইড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে এখানে পাউডারের পরিমান বেশি দিতে হবে।এমন ভাবে মিশ্রনটি তৈরি করতে হবে যাতে পানির সাথে সম্পূর্ণ মিশে যায়। এরপর গাছের গোড়ায়, পাতায় আপনি সহজেই স্প্রে করতে পারবেন।