থানকুনি পাতা এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
বৈজ্ঞানিক নামঃ Centella asiatica Urban.
পরিবারঃ Apiaceae
ইংরেজি নামঃ Indian Pennywort.
পরিচিতি
থানকুনি এক ধরনের বর্ষজীবী লতা। অঞ্চলভেদে এটি টেয়া, মানকি, তিতুরা, থানকুনি ইত্যাদি নামে পরিচিত। মাটির উপর লতা বেয়ে বেড়ায় এবং লম্বা বৃন্তের উপর গোলাকার খাঁজকাটা কিনারাযুক্ত পাতা উপর দিকে মুখ করে থাকে। আয়ুর্বেদে থানকুনিকে ত্বাষ্ট্রী নামে উল্লেখ করা হয়েছে। একে মুণ্ডুকপনী বা থুলকুড়িও বলা হয়।
বিস্তৃতি
ভারত, বাংলাদেশসহ গীষ্মমণ্ডলীয় দেশের আদ্র্র এলাকায় থানকুনি ভালো হয়। বাংলাদেশের সব জেলাতেই থানকুনি দেখা যায়। সাধারণত পুকুরপাড়ে এ লতা বেশি হয়।
ঔষধি গুণ
আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে থানকুনি রসায়ন গুণসম্পন্ন। থানকুনির প্রধান ব্যবহার আমাশয় ও অন্যান্য পেটের রোগে।
১। থানকুনিতে essential oil রয়েছে, তাই আমাশয় বা অন্য কোনো বদহজমজনিত সমস্যায় পাতার রস ৫/৬ চামচ একটু গরম করে অথবা পাতা থেঁতো করে কাটলেটের মতো ভেজে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রাচার্য তার চিরঞ্জীব বনৌষধি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, শরীরের যে কোনো স্থানে ক্ষত হলে থানকুনি পাতা সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে ক্ষতস্থান ধুয়ে দিলে উপকার হবেই।আর এই পাতার রস দিয়ে তৈরি করা ঘি লাগালে নিরাময় হয়।
৩। আঘাতের ফলে কোনো স্থান থেঁতলে গেলে থানকুনি গাছ বেটে অল্প গরম করে সেখোনে প্রলেপ দিলে সেরে যাবে।
৪। থানকুনি revitalizer হিসেবে কাজ করে (Chevallier, 1996); তাই থানকুনি পাতার রস ৫/৬ চামচ একটু গরম করে এক কাপ দুধের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে খেল দেহের লাবণ্য ও কান্তি ফিরে আসে।
৫। অপুষ্টির কারণে চুল উঠে গেলেও উপর্যুক্ত নিয়েমে রস খেলে বিশেস উপকার হয়।
৬। বেশি ঘাম হলে এবং তা থেকে দুর্গন্ধ হলে একই নিয়মে রস খেতে হবে, তবে এক্ষেত্রে বেশি দিন ব্যবহার করতে হবে।
৭। বাচ্চাদের কথা বলতে দেরি হলে বা স্পষ্ট কথা বলতে না পারলে ১ চামচ থানকুনি পাতার রস গরম করে ঠাণ্ডা হলে ১ চামচ মধু মিশিয়ে ঠাণ্ড দুধের সাথ কিছুদিন খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
৮। থানকুনি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে (Chevallier,1996); স্মৃতি বিস্মরণে ভারতের বৈদ্যকবৃন্দ থানকুনি পাতার রস ২০-২৫ মি.লি. আধাকাপ দুধ ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে দিয়ে থাকেন।
৯। ভেষজবিজ্ঞানী ড. আব্দুল গণির মতে থানকুনির অত্যন্ত বলকারক, রুচিবর্ধক ও হজম বৃদ্ধিকারক গুণ রয়েছে। এর পাতা বেটে ভর্তা বা ঝোল রান্ন করে ভাতের সঙ্গে খেলে পেটের বিভিন্ন অসুখ, বদহজম, ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেট ব্যথা সেরে যায়। এর রস Ulcer, Eczema, Leprosy, Itching ও অন্যান্য চর্মরোগ সরাতে অত্যান্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পাতার রস Cataract সহ বিভিন্ন চক্ষু রোগে ব্যবহার হয়।
এছাড়াও
১। ত্বকের ভিতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে।
২। ত্বকের বলিরেখা কমায়।
৩। উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
৪।ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে থানকুনি পাতাঃ
১। চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
২। নতুন চুল বৃদ্ধি/গজাতে সাহায্য করে।
৩।চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
ব্যবহার বিধিঃ
১।চুলের যত্নেঃ পরিমাণ মতো থানকুনি পাতার গুড়া নিতে হবে। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সবশেষে পেস্টটা চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ১০ মিনিট পরে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা। সপ্তাহে কম করে ২ বার এইভাবে চুলের পরিচর্যা করলে চুল পড়া কমে যাবে।
২ত্বকের যত্নেঃ থানকুনি পাতার গুড়া, মুলতানি মাটির গুড়া, নিম গুড়া, সজনে গুড়া পানি মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
অন্যান্য ব্যবহার
থানকুনির পাতা শাক হিসেবে অনেকে রান্ন করে খেয়ে থাকেন।